হাতিশুঁড় গাছের শিকড় খাওয়ার নিয়ম
হাতিশুঁড় এক প্রকার আগাছা জাতীয় উদ্ভিদ। এর সংস্কৃত নাম শ্রীহস্তিনী। এই গাছ বিভিন্ন ঝারঝোপে বা রাস্তার আশেপাশে, একটু উঁচু জায়গায় অযত্নে আগাছা হিসেবে বেড়ে ওঠে। এ গাছটি মহা ঔষধি গুণসম্পন্ন আয়ুর্বেদিক ওষুধ হিসেবে বিভিন্ন রোগ নিরাময় করতে সাহায্য করে।
এটি শাখান্বিত উদ্ভিদ যা এক থেকে দেড় ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। এ গাছের কান্ড পাতা লোমযুক্ত। পত্রপিঠ বা পাতা সবুজ অমৃণ বা খসখসে, পাতার কিনারা ঢেউ খেলানো। কান্ডের শীর্ষে লম্বা ও বাঁকানো পুষ্পদন্ড জুড়ে ছোট ছোট সাদা সাদা ফুল ফোটে। বাঁকানো পুষ্পদন্ড দেখতে হাতিশুঁড় এর মত বলে এর নাম হাতিশুঁড় গাছ।
সাধারণত ফুলের রং সাদা হয় তবে মাঝে মাঝে হালকা বেগুনি রংয়ের ফুল দেখা যায়। সারা বছরই ফুল ফোটে তবে বর্ষাকালে বেশি ফুটতে দেখা যায়। এটি এশিয়া মহাদেশের উদ্ভিদ। এর ইংরেজি নাম ইন্ডিয়ান টার্নসোল (Indian Turnsole), ইন্ডিয়ান হ্যালিওট্রপ (Indian Heliotrope)।
পোস্ট সুচিপত্রঃ হাতিশুঁড় গাছের শিকড় খাওয়ার নিয়ম
এই গাছে কি কি উপাদান রয়েছে এবং অর্থনৈতিক গুরুত্ব
এই গাছে বিভিন্ন ধরনের জৈব উপাদান রয়েছে। চলুন জেনে নিই এই গাছে কি কি উপাদান রয়েছে এবং অর্থনৈতিক গুরুত্ব। যেমন ইনডিসিন, পাইরোলিজিডিন আলক্যালয়েডস, হেলিওট্রিন এবং শিকড়ে এসট্রাডিওল বিদ্যমান। এর অর্থনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম। ভেষজ চিকিৎসায় এর ব্যবহার বহুকাল ধরে চলে আসছে। এই গাছের পাতার রস ফোড়া, ক্ষত, চোখের কনজাংটিভাইটিস এর চিকিৎসায় ব্যবহার হয়।
হাতিশুঁড় গাছের শিকড় খাওয়ার নিয়ম
হাতিশুঁড় গাছের শিকড় খাওয়ার নিয়ম হচ্ছে প্রথমে আপনাকে হাতিশুঁড় গাছ সংগ্রহ করার জন্য উপযুক্ত গাছটি বেছে নিতে হবে। খেয়াল রাখবেন গাছটি অবশ্যই যেন প্রাপ্তবয়স্ক অথবা বড় বা মাঝারি ধরনের গাছ হয়ে থাকে এবং গাছটিতে অবশ্যই ফুল ধরে থাকতে হবে। গাছটি এমন ভাবে তুলতে হবে যাতে মূল বা শিকড় সুন্দরভাবে উঠে আসে। শিকড় বা মূল খাওয়ার জন্য যেসব উপাদান প্রয়োজন সেগুলো হলো কাঁচা পান, মধু, কালিজিরা এবং হাতিশুঁড় গাছের মূল বা শিকড়।
প্রথমে পরিষ্কারভাবে ধুয়ে নিতে হবে। তারপর একটি পান নিতে হবে। গাছের শিকড় প্রায় এক ইঞ্চি পরিমাণ কেটে নিতে হবে। খেয়াল রাখবেন অবশ্যই এক ইঞ্চির বেশি নেওয়া যাবে না। পান টিতে এক টেবিল চামুচ মধু ভালভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। তারপর এক ইঞ্চি কাটা হাতিশুঁড় গাছের শিকড় ওই পানের সাথে দিয়ে সাধারণ ভাবে আমরা যেভাবে পান খায় সেইভাবে খেয়ে নিতে হবে।
এইভাবে উপকরণ টি তৈরি করে সকালে খালি পেটে খেতে হবে। এতে আপনি ভাল উপকার পাবেন। এই প্রক্রিয়ায় সেবন করলে আপনার লিঙ্গ শক্ত হবে। আর আপনি সহবাসের এক ঘন্টা আগেও খেতে পারেন। এতে আপনি অনেকক্ষণ সহবাস করতে পারবেন। প্রতিদিন খেলে এক সপ্তাহের মধ্যেই আপনি ফলাফল পেতে বাধ্য। কারণ এটি প্রাকৃতিক এবং কোন সাইড ইফেক্ট নাই।
তবে এটার শিকড় যদি মোটা হয় তাহলে এক ইঞ্চি, আর যদি শিকড় পাতলা বা সুতার মত শিকড় যদি নেন তাহলে আপনি ২ ইঞ্চি নিতে পারেন। বেশি খেলে এটা প্রথমত সমস্যা হতে পারে কারণ এটি খুবই উত্তেজক। আপনি এটা সহ্য করতে পারবেন না। প্রতিদিন একবারই খাবেন, দুইবার খেতে যাবেন না। দুইবার বা তার বেশি খেলে আমরা কোন ভাবেই দ্বায়ী থাকব না। তাই এই বিষয়টি অবশ্যই খেয়াল রাখবেন।
হাতিশুঁড় গাছের শিকড় বা মূল খাওয়ার উপকারিতা
হাতিশুঁড় গাছের শিকড় বা মূল খাওয়ার উপকারিতা অপরিসীম।
- আপনার দেহে যদি ছত্রাক জনিত কোন সংক্রমণ হয়ে থাকে এবং শরীরে লাল চাকা দাগ দেখা যায় তাহলে হাতিশুঁড় গাছের শিকড় বা মূল এর রস করে আক্রান্ত স্থানে লাগালে ওই সংক্রমণ জায়গাটি ভালো হয়ে যাবে।
- জ্বর ও সর্দি কাশিতে গাছের শিকড় পানির সাথে ফুটিয়ে সেই পানি খেলে ভালো উপকার পাবেন।
- দাঁতের মাড়ি ফোলা আক্রান্ত ব্যক্তি হাতিশুঁড় এর মূল চিবালে মাড়ি ফোলা কমে যায়।
- হাতিশুঁড় গাছের শিকড় প্রতিদিন খেলে আপনার লিঙ্গ শক্ত হবে এবং আপনি বেশিক্ষণ সহবাস উপভোগ করতে পারবেন।
- হাতিশুঁড় গাছের মূল বা শিকড় মধুর সাথে মিশিয়ে টানা ২১ দিন খেতে পারলে তার যৌন শক্তি সর্বোচ্চ পর্যায়ে যেতে পারে। বিশ্বাস নাহলে আপনি সঠিক নিয়মে পরীক্ষা করে দেখতে পারেন।
হাতিশুঁড় গাছের পাতার গুণাগুণ
হাতিশুঁড় গাছের পাতার গুণাগুণ তা নিম্নে জানতে পারব আমরা।
- বিষাক্ত পোকার কামড়ে পাতার রস লাগালে জ্বালা এবং ফোলা কমে যায়।
- টাইফয়েড রোগে এই উদ্ভিদের পাতা হতে পারে কার্যকারী সমাধান। এর পাতার রস হালকা গরম করে পানিতে মিশিয়ে খেলে টাইফয়েড ভালো হয়।একজিমা থেকে মুক্তি পেতে হাতিশুর গাছের পাতা থেঁতলে আক্রান্ত স্থানে লাগাতে হবে। এভাবে বেশ কিছুদিন ব্যবহারে একজিমা সেরে যাবে।
- রিউম্যাটিক বাতে রেডির তেল বা কাস্টার অয়েল এর সঙ্গে পাতার রস মিশিয়ে গরম করে গাঁটে লাগাতে হবে। গাঁটের ব্যথা দূর হয়ে যাবে।
- কাটা ছেঁড়া স্থানে হাতিশুঁড় গাছের পাতা থেঁতলে রস বের করে কাটা ছেঁড়া স্থানে দিতে হবে এতে কাঁটা ছেঁড়া ঘুচে যাবে।
- ব্রণ হলে বা ব্রণের দাগ হয়ে গেলে হাতিশুঁড় গাছের পাতা ও তার কচি ডাল থেঁতলে দুপুরে গোসল করতে যাওয়ার এক ঘন্টা পূর্বে ব্রণের ওপর প্রলেপ দিলে ব্রণ সারে এবং নতুন করে আর ব্রণ হয় না।
- ফোলা স্থানে পাতা বেটে অল্প গরম করে ফোলা স্থানে লাগালে ফোলা কমে যায়।
- সর্দি লাগলে এ হাতিশুঁড় গাছের পাতা ছেচে দুই চামচ রস খেলে সর্দি ভালো হয়ে যায়।
হাতিশুঁড় গাছের শিকড় খাওয়ার আদর্শ সময়
হাতিশুঁড় গাছের শিকড় খাওয়ার আদর্শ সময় হলো প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেতে হবে। তবে আপনি রাতে ঘুমানোর এক ঘন্টা পূর্বেও খেতে পারেন। এই দুইটি হচ্ছে হাতিশুঁড় গাছের শিকড় খাওয়ার আদর্শ সময়। এতে আপনি ফলাফল খুবই দ্রুত পাবেন।
যৌনশক্তি বৃদ্ধিতে শিকড় বা মূলের উপকারিতা অপরিহার্য
হাতিশুঁড় গাছের শিকড় বা মূল যৌনশক্তি বৃদ্ধিতে এটির উপকারিতা অপরিহার্য। যৌন সমস্যার সমাধানে এটির ব্যবহার অনেক আগে থেকেই হয়ে আসছে। এটি গবেষণায় প্রমাণিত। অধিকাংশ মানুষ এটা ব্যবহারে উপকৃত হয়েছেন। কারণ এটি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া মুক্ত।
পাঠকের মন্তব্য
হাতিশুঁড় গাছের শিকড় বা মূল, পাতার সম্পর্কে আমরা ইতিমধ্যে বেশ কিছু ব্যবহার জেনেছি এবং শিখেছি। একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে অবশ্যই আমাদেরকে যে কোন খাবার খাওয়ার পূর্বে এ বিষয়ে গুলো জেনে নেওয়া উচিত। কারণ বিষয়গুলো জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এতক্ষণে আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। যদি আপনি নিয়মিত এ ধরনের স্বাস্থ্যমূলক অথবা তথ্যমূলক অনুচ্ছেদ পড়তে চান তাহলে আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করুন। কারণ আমরা আমাদের এই ওয়েবসাইটে নিয়মিত এ ধরনের অনুচ্ছেদ প্রকাশ করে থাকি। আপনার এবং আপনার পরিবারের সুস্থতা কামনা করে আজকের মত এখানেই শেষ করছি। ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url