ডুয়েল কারেন্সি কার্ড কিভাবে পাবো
এই পোস্টে ডুয়েল কারেন্সি কার্ড সম্পর্কিত সকল তথ্য প্রদান করা হয়েছে। আশা করি ডুয়েল কারেন্সি কার্ড সম্পর্কিত আপনার মনে যত প্রশ্ন রয়েছে সেগুলো সমন্ধে আপনি উত্তর পেয়ে যাবেন।
ডুয়েল কারেন্সি কার্ড বর্তমান বিশ্বে বিভিন্ন কাজ সম্পাদন করার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বিশেষ করে যারা দেশের বাইরে ভ্রমণে বা কোন কাজের ক্ষেত্রে অথবা চিকিৎসার জন্য যায় তাদের এই কার্ড সমন্ধে ভাল ধারনা রয়েছে।
পোস্ট সূচিপত্রঃ ডুয়েল কারেন্সি কার্ড কিভাবে পাবো
ডুয়েল কারেন্সি কার্ড আসলে কি?
ডুয়েল কারেন্সি কার্ড সাধারণত প্লাস্টিকের যেকোন ব্যাংকের ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের মতই দেখতে। কিন্তু কিছুটা আলাদা ধরনের। সাধারণত কোন ব্যাংকের কার্ড আমরা দেশের অভ্যন্তরে লেনদেন করতে পারি। কিন্তু দেশের বাইরে কার্ডের কোন মূল্য নেই বা লেনদেন করতে পারবেন না। তবে ডুয়েল কারেন্সি কার্ডের কার্য্যক্ষমতা দেশের বাইরেও করতে পারবেন। এটি এমন একটি ভার্চুয়াল কার্ড যেটা দিয়ে আপনি একই সাথে দুইটি আলাদা আলাদা মুদ্রায় লেনদেন করতে পারবেন।
বিশেষ করে ডুয়েল কারেন্সি কার্ড দিয়ে বাংলাদেশের মুদ্রার সাথে সাথে মার্কিন ডলারেও লেনদেন করতে পারবেন। এ সকল কার্ড প্রভাইডার প্রতিষ্ঠান গুলো বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত নেটওয়ার্ক থাকায় এই সুবিধা দিয়ে থাকেন। ডুয়েল কারেন্সি কার্ড সাধারণত ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড অথবা প্রিপেইড কার্ডও হতে পারে। মূলত এটি এমন একটি ভার্চুয়াল কার্ড যেখানে আপনি নিজ দেশের মুদ্রাকে ডলারে রূপান্তরিত করে যে কোন দেশে ব্যবহার করতে পারবেন।
ডুয়েল কারেন্সি কার্ডের সুবিধা কি কি
বিশ্বব্যাপী লেনদেনের সুবিদ্ধার্থে ডুয়েল কারেন্সি কার্ড ব্যবহার হয়ে থাকে। আপনি অনায়াসে বিদেশে নিজের দেশের মুদ্রাকে ডলারে রূপান্তরিত মাধ্যমে খরচ করতে পারেন। ডুয়েল কারেন্সি কার্ড আমাদের কি কি কাজে লাগে তা নিম্নে সহজ ভাবে উল্লেখ করা হলো-
- বিদেশ থেকে কোন পণ্য ক্রয় করার ক্ষেত্রে এই ডুয়েল কারেন্সি কার্ডটি কাজে লাগে।
- দেশের বাইরে ভ্রমণে গেলে এই কার্ডটি কাজে লাগে যেকোন আর্থিক লেনদেন বা খরচ করার জন্য।
- সোশ্যাল মিডিয়ায় বা ডিজিট্যাল মার্কেটিং এর কোন কিছু বুস্ট করার জন্য এই কার্ডটির প্রয়োজন হয়ে থাকে।
- বিভিন্ন ইন্টারন্যাশনাল ই-কমার্স সাইট থেকে পণ্য কেনাকাটার জন্য এই কার্ডটির প্রয়োজন হয়।
- ফ্রিল্যান্সারদের বিভিন্ন অনলাইনের পেমেন্ট নেওয়ার জন্য এই কার্ডটির প্রয়োজন হয়।
- অন্য দেশ থেকে ডলার রিসিভে পাচ্ছেন ২.৫% রেমিটেন্স লাভের সুবিধা।
এছাড়াও আরও বিভিন্ন ধরনের কাজে ডুয়েল কারেন্সি কার্ডের ব্যবহার হয়ে থাকে। আমাদের প্রয়োজনের তাগিতে অনেক সময় বিদেশে অর্থ পাঠাতে হয়, এক্ষেত্রে আপনি ডুয়েল কারেন্সি কার্ড ব্যবহার করে সুবিধা ভোগ করা যায়। বর্তমানে ডুয়েল কারেন্সি কার্ডের চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ডুয়েল কারেন্সি কার্ড কিভাবে পাবো
এটি যেকোন মানুষ ব্যবহার করতে বা নিতে পারেন না। এই কার্ডটি নিতে হলে অবশ্যই আপনাকে নির্দিষ্ট কোন ব্যাংকে ডুয়েল কারেন্সি একাউন্ট খুলতে হবে অথবা আগের একাউন্ট খোলা থাকলেও হবে।এর জন্য অবশ্যই প্রয়োজন একটি পাসপোর্ট। পাসপোর্ট ছাড়া ডুয়েল কারেন্সি কার্ড করা সম্ভব না। তাছাড়া আপনার কোন ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খোলা থাকে তাহলে আপনি ব্যাংকে যোগাযোগ করে এই কার্ডটি পেতে পারেন।
যদি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এই কার্ডটি দিয়ে থাকে তাহলে নিতে পারবেন। বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের ব্যাংক আছে যারা ডুয়েল কারেন্সি কার্ড প্রদান করে থাকেন। এই সব ব্যাংকের মাধ্যমে একাউন্ট খুলে তাদের শর্ত মোতাবেক ফরম পূরণ করে এই কার্ডটি অর্জন করতে পারেন। বর্তমানে যেসব ব্যাংক এই কার্ডটি প্রদান করে যেমন-
ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড
এই ব্যাংকে যদি আপনার একাউন্ট খোলা থাকে তাহলে আপনি ডুয়েল কারেন্সি কার্ড পেতে পারেন। এর জন্য আপনার একাউন্টে নির্দিষ্ট পরিমাণ (৫০০০ হলেও হবে) টাকা থাকা লাগবে। পরবর্তীতে এই টাকা তুলে নিতে পারবেন। ডুয়েল কারেন্সি কার্ড পেতে হলে আপনাকে ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ করে ডুয়েল কারেন্সি কার্ডে কনভার্ট করতে হবে। এর জন্য অবশ্যই আপনার পাসপোর্ট প্রয়োজন হবে। তবে এই কার্ডটি নেওয়ার সময় আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা জন্ম নিবন্ধনের ফটোকপি লাগবে।
ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড
বাংলাদেশের মানুষদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যাংক হলো ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড। এই ব্যাংকটি গ্রাহকদের সাধারণ কার্ডের পাশাপাশি ডুয়েল কারেন্সি কার্ড প্রদান করে থাকেন। যা প্রতিবেশী দেশ ভারতে ব্যাপক ভাবে পরিচিত। একই ভাবে অর্থাৎ পাসপোর্টের সাহায্যে এই ব্যাংকে যোগাযোগ করে ডুয়েল কারেন্সি কার্ড নিতে পারেন।
ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড
ইন্টারন্যাশনাল পর্যায়ে এই ব্যাংক ডুয়েল কারেন্সি কার্ডের সেবা প্রদানে ভাল খ্যাতি অর্জন করেছে। বিশেষ করে ভার্চুয়াল ডুয়েল কারেন্সি কার্ড হিসেবে বাংলাদেশের বাইরে এর সার্ভিস অনেক ভাল। আপনি চাইলেই ইস্টার্ন ব্যাংকের ভার্চুয়াল ডুয়েল কারেন্সি কার্ড ব্যবহার করে ফেসবুক পেজের এবং ইউটিউব চ্যানেলের ভিডিও বুস্ট করতে পারবেন খুব সহজে। এই ব্যাংক হতে সেই একই পদ্ধতি অবলম্বন করে আপনি এই কার্ডটি পেয়ে যাবেন।
আইএফআইসি ব্যাংক
বাংলাদেশের আরেকটি অন্যতম ব্যাংক হলো আইএফআইসি ব্যাংক লিমিটেড। যা বাংলাদেশী মানুষদের কাছে অনেক জনপ্রিয় ফিন্যান্স ব্যাংক হিসেবে পরিচিত। এই ব্যাংক হতেও আপনি ডুয়েল কারেন্সি কার্ডের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।
মেঘনা ব্যাংক
বাংলাদেশের আরেকটি অন্যতম ব্যাংক হল মেঘনা ব্যাংক লিমিটেড যা দীর্ঘদিন ধরে ডুয়েল কারেন্সি কার্ডের সেবা প্রদান করে আসছে। এই ব্যাংকটির ডুয়েল কারেন্সি কার্ড বাংলাদেশি মানুষ আস্থার সাথে ব্যবহার করছে।
সোনালী ব্যাংক লিমিটেড
বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় সরকারী ব্যাংকের মধ্যে একটি। সোনালী ব্যাংক কি ডুয়েল কারেন্সি কার্ড দেয় কিনা এ সম্পর্কে অনেকের ধারণা নেই বিধায় অনেকে সোনালী ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট থাকা সত্ত্বেও অন্য ব্যাংক থেকে ডুয়েল কারেন্সি ডেবিট কার্ড গ্রহণ করে থাকেন। বিগত কয়েক বছর ধরে এই ব্যাংকটি গ্রাহকদের ডুয়েল কারেন্সি কার্ডের সেবা প্রদান না করলেও বর্তমান সময়ে এই সেবাটি চালু করছে।
আপনি এখন সোনালী ব্যাংক থেকে ডুয়েল কারেন্সি কার্ড নিতে পারেন। এর জন্য অবশ্যই আপনার পাসপোর্ট থাকতে হবে এবং কিছু প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র দিয়ে আবেদন করলে আপনি ডুয়েল কারেন্সি কার্ড পেয়ে যাবেন। এসব ব্যাংক ছাড়াও বাংলাদেশে অনেক বিভিন্ন ধরনের ব্যাংক রয়েছে যারা ডুয়েল কারেন্সি কার্ড এর সেবা প্রদান করে থাকেন। আপনি চাইলেই এমন ব্যাংক যেসব ব্যাংক ডুয়েল কারেন্সি কার্ড প্রদান করে সেসব ব্যাংক থেকে সেবা গ্রহণ করতে পারেন।
ডুয়েল কারেন্সি কার্ড করতে কি কি লাগে
ডুয়েল কারেন্সি কার্ড পেতে হলে আপনার কিছু ভ্যালিড কাগজপত্র প্রয়োজন হবে। এই কার্ডটি করতে কি কি লাগে তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
- জাতীয় পরিচয় পত্র অথবা জন্ম নিবন্ধনের ফটোকপি।
- পাসপোর্ট সাইজের দুই কপি ছবি।
- অবশ্যই পাসপোর্ট থাকতে হবে (বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবহারে অনুমোদনের জন্য বৈধ পাসপোর্ট)।
- ব্যাংক কর্তৃক KYC সঠিক তথ্য দিয়ে পূরণ করতে হবে।
ডুয়েল কারেন্সি কার্ড করতে কত টাকা লাগে
ডুয়েল কারেন্সি কার্ড করতে আপনার অ্যাকাউন্টে মাত্র ১০০০ টাকা ডিপোজিট বা জমা করতে হবে। আপনি চাইলে এর চেয়েও বেশি টাকা জমা করতে পারেন এতে কোন সমস্যা নেই। আপনার কার্ডটি হয়ে গেলে পরবর্তীতে এই জমাকৃত টাকা আপনি সম্পূর্ণ উত্তোলন করে নিতে পারবেন। সেই ব্যাংক কর্তৃক এটিএম বুথের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করলে কোন চার্জ কাটবে না। সম্পূর্ণ ফ্রিতে টাকাটি তুলে নিতে পারবেন।
ডলার এনডোর্সমেন্ট কি এবং কিভাবে করবেন
যে সকল কাজ গুলো আন্তর্জাতিক লেনদেন সম্পৃক্ত, সে সকল কাজগুলোতে অবশ্যই ডলার খরচের প্রয়োজন হয়। যেমন বিদেশ ভ্রমণ, উচ্চশিক্ষা, চিকিৎসা, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি নানান ধরনের কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য বৈদেশিক মুদ্রার প্রয়োজন।
ডুয়েল কারেন্সি কার্ডের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ডলার এনডোর্সমেন্ট। বিশ্ব অর্থনীতি এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারকে বিশ্বব্যাপী সাধারণ বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে ধরা হয়ে থাকে।
ডলার এনডোর্সমেন্ট কি
এই আর্থিক কার্যক্রমটির অর্থ হলো দেশের অভ্যন্তরে অথবা দেশের বাইরে ডলার ব্যবহারের অনুমোদন। এর মাধ্যমে ও বৈদেশিক পণ্য কেনাকাটা বা কোন আর্থিক সেবা গ্রহন করার জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ ডলার ব্যবহারের বৈধতা পাওয়া।
এই ডলারগুলো সাধারণত বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে অথবা বিদেশে যে কোন সেবা গ্রহণের মাধ্যমে প্রয়োজন সাপেক্ষে সেই দেশের প্রচলিত মুদ্রায় রূপান্তরিত করে নিতে পারেন। তাছাড়া আপনি এই ডলার সরাসরি অথবা রূপান্তরিত মুদ্রা যেকোন প্রয়োজনে খরচ করতে পারেন।
ডলার এনডোর্সমেন্ট এর উপায়
বৈধ বা আইনগতভাবে ডলারের ব্যবহার অর্জন করতে হলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে অনুমোদন পেতে প্রয়োজন হয় পাসপোর্ট এর সিলের মাধ্যমে। এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে অনুমোদনটি কে দিচ্ছে সেটা।
অর্থাৎ ডলার গুলো কেনা হচ্ছে কোথা থেকে এবং ডলার বিক্রি করার অনুমোদনের যথাযথ বৈধতা আছে কিনা সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। দেশের অভ্যন্তরে শুধুমাত্র বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদিত ব্যাংক। তাছাড়া মানি এক্সচেঞ্জার ও ডিলাররাও আইনগতভাবে অনুমোদন নিয়ে ডলার কেনা বেচা করে। অনুমোদন ছাড়া অন্য ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান থেকে ডলার ক্রয়-বিক্রয় করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
ব্যাংক হতে ডলার এনডোর্স করার প্রক্রিয়া
দেশের যেকোনো সরকারি বা বেসরকারি ব্যাংক পাসপোর্ট বইয়ের শেষের দিকে এনডোর্সমেন্ট পাতায় সিলমোহর দিয়ে লেখা থাকে নির্দিষ্ট পরিমাণ ডলার। এটিই হচ্ছে অনুমোদনকৃত ডলারের পরিমাণ, যেটি এনডোর্সকারী নগদ ক্যাশে ডলার তুলতে পারেন অথবা অনলাইনের মাধ্যমেও ব্যবহার করতে পারেন।
এই ডলার প্রাপ্তির জন্য এনডোর্সকারীকে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের সমপরিমাণ বাংলাদেশি টাকা প্রদান করতে হয়। বাংলাদেশি টাকার পরিমান নির্ধারিত হয় বর্তমান বিশ্বে বাংলাদেশি টাকা এবং ডলারের পরিমাণ বিনিময় হার অনুসারে। এই হারটি অবশ্য নির্দিষ্ট রেঞ্জের মধ্যে বিভিন্ন ব্যাংকে কম বেশি হয়ে থাকে।
পরিশেষে
বর্তমান যুগ ডিজিটাল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাল মিলিয়ে চলছে। ভবিষ্যতে ডুয়েল কারেন্সি কার্ড বেশির ভাগ মানুষের প্রয়োজন হয়ে উঠবে।
তো এই ছিল আজকের বিষয় ডুয়েল কারেন্সি কার্ড সম্পর্কে। এই তথ্য গুলো যদি আপনার কাজে আসে তাহলে একজন ব্লগার হিসেবে নিজেকে স্বার্থক মনে করব। কারণ এই ওয়েব সাইটের মূল উদ্দেশ্য হলো জন সাধারণের কাছে প্রকৃত ও নির্ভুল তথ্য প্রদান করা। আপনি চাইলে আপনার বন্ধু বা আত্মীয় স্বজনদের কাছে শেয়ার করতে পারেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url