ছারপোকা থেকে মুক্তির উপায় কি
ছারপোকার জীবনচক্র থেকে শুরু করে ছারপোকা থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় পর্যন্ত সমস্ত তথ্য আপনি আজকের এই পোস্টটিতে পেয়ে যাবেন। আসুন ছারপোকা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই।
বিছানায় আরাম করে ঘুমিয়ে আছেন আর সকালে উঠেই। দেখলেন শরীরে এখানে ওখানে যন্ত্রনাদায়ক কামড়। আপনি ভেবেই আতকে উঠলেন ছারপোকার কামড়! ছারপোকা কিভাবে এলো?
পোস্ট সূচিপত্রঃ ছারপোকা থেকে মুক্তির উপায় কি
- ছারপোকা থেকে মুক্তির উপায় কি
- বিছানার ছারপোকা দূর করার কার্যকরী উপায়
- ছারপোকা তাড়ানোর কীটনাশক
- ছারপোকা বিছানায় কেন হয়?
- আপনার বিছানায় ছারপোকা আছে কিভাবে বুঝবেন
- ছারপোকা কামড়ালে কি হয়?
- ছারপোকা কামড়ালে কি কি রোগ হতে পারে?
- ছারপোকা কামড়ালে করনীয় কি
- ছারপোকার জন্ম কবে এবং কোথায়?
- আকাশী গাছের পাতার ব্যবহারে ছারপোকার বিদায়
- ছারপোকার জীবন চক্র
- ছারপোকার বৈশিষ্ট্য এবং জীবনকাল কেমন
- পরিশেষে
ছারপোকা থেকে মুক্তির উপায় কি
ছারপোকার অস্তিত্ব পুরোপুরি বা স্থায়ীভাবে বিনষ্ট করা যথেষ্ট কঠিন সাধ্য। তবে সর্বনিম্ন পর্যায়ে এর উপদ্রব নামিয়ে আনা যায় বারং বার এদের ডিম নষ্ট করে এবং ছারপোকা মারার কীটনাশক ব্যবহার করে।
ঘরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে; এর প্রতিকারমূলক কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে ঘরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে দেড় ঘণ্টা বা ৯০ মিনিটেরও বেশি সময় ধরে ৫০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় রেখে দেওয়া। যাতে ছারপোকা অধিক তাপমাত্রায় পালিয়ে যায় । ১১৩ ডিগ্রি তাপমাত্রায় ছারপোকা মারা যায়।
কীটনাশক ব্যবহার; করেও ছারপোকার উপদ্রব কম করা যায়। বর্তমানে বাজারে ছারপোকা মারার বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক ঔষুধ বের হয়েছে।
পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন; উচ্চ তাপমাত্রার গরম পানিতে কাপড় পরিষ্কার করা। ধোয়া কাপড়চোপড় বা বিছানার চাদর ৩০ মিনিট গরম বাতাসে শুকাতে দেওয়া। বিছানা পত্র, আসবাবপত্র পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। এছাড়া ভ্যাকুয়াম দিয়ে মাঝে মধ্যে ঘর পরিষ্কার করা, কাপড়-চোপড় বা বিছানার চাদর প্লাস্টিকে মুড়িয়ে ফ্রিজের মধ্যে ৩ থেকে ৪ দিন রেখে দেওয়া। নিয়মিত এইসব কাজ গুলো করলে ছারপোকার হাত থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব।
ন্যাপথলিন; গুড়ো ব্যবহার করে ছারপোকা তাড়ানো যায়। সেই সব সমস্ত স্থানে যেখানে ছারপোকার বসবাস সেখানে এর গুড়ো ছিটিয়ে রাখুন দেখবেন ছারপোকা পালিয়ে গেছে। এটি খুবই কার্যকরী।
ল্যাভেন্ডার অয়েল; ঘরের যে স্থানে ছারপোকা রয়েছে সে সব স্থানে ল্যাভেন্ডার অয়েল স্প্রে করুন। নিয়মিত দুই থেকে তিন ল্যাভেন্ডার অয়েল স্প্রে করার ফলে ছারপোকা ঘর ছেড়ে পালাবে।
কেরোসিনের প্রলেপ; ছারপোকা তাড়াতে ঘরের আসবাবপত্রে মাঝেমধ্যে কেরোসিনের প্রলেপ দিন এতে ছারপোকা সহজেই দূর হবে।
অ্যালকোহল; ছিটিয়ে খুব সহজেই ছারপোকা তাড়ানো যায়। এর প্রভাবে ছারপোকা মারাও যায়।
শসা; একটি খোসা সহ শসা কেটে নিন এবং এটিকে ব্লেন্ড করুন তারপর এর সাথে তিন চামচ পানি মিশিয়ে নিন। এবং এবার একটি ব্রাশের সাহায্যে মিশ্রিত দ্রবনটি যেখানে ছারপোকার উপদ্রব বেশি সেখানে সেখানে লাগিয়ে দিন। ৫ মিনিটের মধ্যে ছারপোকা এবং তেলাপোকা পালিয়ে যাবে।
আকাশমনি; বা আকাশি গাছের পাতার ব্যবহারে ছারপোকার উপদ্রব দূর করা যায়। এই গাছের পাতা গুলো বিছানার তলে রেখে দিন। একদিন পরেই ছারপোকার অস্তিত্ব খুঁজে পাবেন না।
বিছানার ছারপোকা দূর করার কার্যকরী উপায়
বিছানা থেকে ছারপোকা দূর করার কার্যকরী উপায়ের মধ্যে একটি রয়েছে কীটনাশক ওষুধ স্প্রে করা। ঘরে বসেই নিজেই কীটনাশক ঔষুধ তৈরি ছারপোকার আবাস স্থলে বা তোষক বা জাজিমের কোণায় কোণায় স্প্রে করে ছারপোকা দূর করতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ হাতিশুঁড় গাছের শিকড় খাওয়ার নিয়ম
ন্যাপথলিন গুড়ো করে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দেওয়া এবং বিছানার আশেপাশে রেখে দেওয়ার ফলে ছারপোকা দূর করা যায়। মাঝে মধ্যে ঘরের কাপড়, বিছানার তোষক বা ম্যাট্রেস কড়া রোদে তাত লাগানোর ফলেও ছারপোকা দূর হয়। এছাড়া আপনি আকাশী গাছের পাতা বিছানার তলে রেখে দিয়ে ছারপোকা দূর করতে পারেন।
ছারপোকা তাড়ানোর কীটনাশক
ছারপোকা তাড়ানোর জন্য কখনোই কীটনাশক ব্যবহার করা উচিত নয়। বাজারে বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক পাওয়া গেলও সেগুলো স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকারক। ঘরোয়া ভাবে খুবই সহজে উপায়ে কীটনাশক জাতীয় দ্রবণ তৈরি করতে পারেন। যেভাবে তৈরি করবেন তার উপাদান গুলো হল স্যাভলন বা ডেটল এক কাপের অর্ধেক কাপ পরিমাণ, ব্লিচিং পাউডার এক কাপ, ৭০০ মিলি পানি।
এবং একটি সাধারণ বোতল ও একটি স্প্রে গান প্রয়োজন হবে। পানির সাথে স্যাভলন ও ব্লিচিং পাউডার মিশিয়ে দ্রবণটি তৈরি করে ফেলুন। খালি বোতল ভরে নিন এবং স্প্রে গানের সাহায্যে ছারপোকার স্থান গুলোতে স্প্রে করে ছারপোকা মেরে ফেলতে পারেন। এছাড়া আরও বিভিন্ন ধরনের ঘরোয়া পদ্ধতিতে ওষুধ তৈরি করা উপায় রয়েছে। যা শতভাগ কার্যকরী হয়ে থাকে।
ছারপোকা বিছানায় কেন হয়?
বিছানা ময়লা হলেই যে ছারপোকা হবে তেমন কোন কারণ নাই। যেকোন বিছানাতেই ছারপোকা হতে পারে। এরা রক্ত গ্রহণ করে বলেই মানুষের আশে পাশে থাকতে দেখা যায়। চলুন জেনে নিই ছারপোকা বিছানায় কেন হয়? ছারপোকা মূলত আপনার অজান্তেই ট্রাভেলের মাধ্যমে বা এক মাধ্যম থেকে আরেক মাধ্যমের সাহায্যে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকে।
যেমন এমন কোন স্থানে ছারপোকা আছে সেখানে থেকে কোন মানুষের শরীরে থাকা পোশাক আশাকের মাধ্যমে, স্যুটকেস বা ব্যাগ পত্র, ট্রেনের সিট, বাসের সিট, বিভিন্ন আসবাবপত্র, বিছানা, ছাত্রাবাস বা আবাসিক হোটেলের মাধ্যমে, ব্যবহৃত সোফা ইত্যাদির মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। এইভাবে ছারপোকা যেকোন বিছানাতেই ছড়িয়ে পড়তে পারে।
একটি ছারপোকা ১০০ ফুট পর্যন্ত হেঁটে যেতে পারে। এদের প্রধান খাদ্য রক্ত। এরা বিশেষ করে মানুষের থেকে ৮ ফিট দূরত্বে অবস্থান করে। ছারপোকা মানুষের জামা কাপড়, জিনিসপত্র, স্যুটকেস ব্যাগ ইত্যাদির মাধ্যমে এক দেশ হতে অন্য দেশে চলে যেতে পারে।
আপনার বিছানায় ছারপোকা আছে কিভাবে বুঝবেন
ছারপোকা বিছানায় আছে কিনা সেটা বুঝার উপায় হচ্ছে আপনি বিছানায় ঘুমিয়ে আছেন আর শরীরে কুট কুট কামড়ানোর জন্য ঘুমানোর সমস্যা হচ্ছে। সকালে উঠে দেখেন শরীরে কামড়ের দাগ। লালচে রঙের দাগ বা এক সমান্তরালে বা একই স্থানে একাধিক দাগ হয়ে থাকে। ফর্সা ত্বকের ক্ষেত্রে কামড়ানোর স্থানটা লালচে বা বাদামি দেখাবে, আর কালো বাদামি ত্বকের ক্ষেত্রে দাগটা বেগুনি হতে পারে এবং অনেক সময় কালো ত্বকের ক্ষেত্রে চোখে ধরা পড়ে না বা বোঝা যায় না।
অধিকাংশ মানুষ প্রথমত পর্যায়ে ছারপোকার কামড় বুঝতে পারে না। কিছুদিন পর অনেক গুলো কামড়ানোর দাগ বা ঘুমানোর সমস্যার মাধ্যমে বুঝতে পারে। কিছু মানুষ বুঝতে পারে যাদের ছারপোকা সমন্ধে কিছুটা হলেও ধারণা আছে। হঠাৎ বিছানায় নজরে পড়তে পারে কোথাও কোথাও রক্তের মত ফোঁটা লেগে আছে। তাহলে বুঝতে হবে ছারপোকা আছে। কারণ অনেক সময় ছারপোকা ঘুমানোর সময় শরীরের চাপে বা চাপা পড়ে মারা যায়।
এছাড়াও বিছানার জাজিম বা তোষেকর কোণায়, সোফার কোণায়, ফার্নিচারের ইত্যাদি স্থানে অনেক সময় ফোঁটা ফোঁটা বাদামি দাগ দেখা যেতে পারে, এগুলো সাধারণত ছারপোকার অবশিষ্ট খাদ্যকণার দাগ। এইসব লক্ষণ গুলি দেখতে পেলে আপনি আপনার ঘরের বিছানায়, পোশাক আশাক, সোফা, ফার্নিচার, আসবাবপত্র, দেয়ালের ফাটল স্থানের ফাঁকে ফাঁকে খুঁজে দেখতে পারেন। তাহলেই বুঝতে পারবেন ছারপোকা আছে কিনা।
ছারপোকা কামড়ালে কি হয়?
রক্ত খেয়ে বেঁচে থাকে প্রাণীদের মধ্যে অন্যতম একটা ছারপোকা। উষ্ণ বা গরম রক্তবিশিষ্ট এমন প্রাণীদের রক্ত খেয়ে এরা বেঁচে থাকে। এদের প্রধান খাদ্য রক্ত, এর জন্য একে রক্ত চোষাও বলে থাকে।
ছারপোকা কে নিয়ে আপনাদের তেমন কোন ভয় পাওয়ার কোন কারণ নাই। কারণ ছারপোকার কামড়ে তেমন কোন সমস্যা বা রোগ হয় না বা বিশেষ কোন রোগ ছড়ায় না। মোটকথা ছারপোকা মানুষের জন্য হুমকির অথবা মারাত্মক কোন কারণ নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থা সিডিসি গবেষণা করে দেখেছে, ছারপোকা সাধারণত কোন সংক্রমণ ছড়ায় না।
কিন্তু এটি অনেক সময় শরীরে চর্ম রোগ ডেকে আনতে পারে। এলার্জির প্রতিক্রিয়ার মত লক্ষণ দেখা দিতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তির জ্বর হতে পারে, ক্লান্তি অনুভব হতে পারে। এটির কামড়ের মাধ্যমে কোন সংক্রামক রোগের বিস্তার হওয়ার প্রমাণ এখনো পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তাই আপনারা এটা কে নিয়ে কোন দুশ্চিন্তায় ভুগবেন না।
ছারপোকা কামড়ালে কি কি রোগ হতে পারে?
আপনি যদি দীর্ঘদিন যাবৎ ধরে ছারপোকার কামড় খেয়ে যাচ্ছেন অথচ কোন ভাবেই প্রতিকারের প্রচেষ্টা করছেন না। তাহলে দীর্ঘদিনের কামড়ের প্রভাবে আপনি রোগেও আক্রান্ত হতে পারেন। ছারপোকা আসলে রাতের অন্ধকারে আমাদের অজান্তেই শরীরে আক্রমণ করে রক্ত খেতে খেতে এমন কিছু ক্ষতিকর উপাদান শরীরে প্রবেশ করিয়ে দেয় সেটা পরবর্তীতে বিভিন্ন ধরনের রোগের লক্ষণ বৃদ্ধি করে ।
শ্বাসকষ্ট, এলার্জি, অ্যানিমিয়া, ইনসমনিয়ার মত রোগগুলো চেপে বসতে পারে শরীরে ছারপোকার কারণে। বিশেষ করে বৃদ্ধ মানুষ বা ছোট বাচ্চাদের প্রতি ছারপোকার প্রভাব বেশি পড়ে। তাই দ্রুত ছারপোকা হতে পরিত্রাণ পাওয়ায় হবে মূল লক্ষ্য।
ছারপোকা কামড়ালে করনীয় কি
ছারপোকার কামড়ের দাগ দেখে দুশ্চিতা বা বিচলিত হওয়ার কোন কারণ নাই। সাধারণত ছারপোকার কামড়ের প্রভাব মানব শরীরে সেই দাগ সপ্তাহ খানেক এর মধ্যেই আপনা আপনি ভাবেই চলে যায়। নির্দিষ্ট সময় পর এর কামড়ের দাগও দেখা যায় না আর চুলকানিও অনুভূত হয় না। তবে কিছু মৌলিক বিষয় মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন আমেরিকার জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ সংস্থা। এগুলোর মধ্যে উল্লখযোগ্য কিছু পরামর্শ হচ্ছে-
- ঠাণ্ডা কিছু যেমন ভেজা কাপড় কামড়ের স্থানে দিয়ে রাখা।
- কামড়ানোর স্থানটি ভালো মত স্যানিটাইজ বা পরিষ্কার করা।
- আক্রান্ত স্থান না চুলকানো।
- অ্যান্টিসেপটিক ক্রিম বা লোশন ব্যবহার করা।
তাছাড়া ছারপোকা প্রতিরোধে তাদের আবাস স্থলে ইনসেক্টিসাইড বা কীটনাশক স্প্রে করার পরামর্শ প্রদান করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ছারপোকার জন্ম কবে এবং কোথায়
ছারপোকার আক্রমণ মূলত সাইমেক্স লেকচুল্যারিয়াস ও সাইমেক্স হেমিপেট্রাস এই দুই প্রজাতির পোকার মাধ্যমে বিস্তার হয়ে থাকে। ক্ষুদ্র পোকা, রক্ত শোষণকারী, বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত এই প্রাণীর নাম ছারপোকা। ছারপোকার ইংরেজি নাম বেডবাগ (bedbug)। ছারপোকা বাংলাদেশে খুবই পরিচিত একটি নাম। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই নামটার সাথে বেশি পরিচিত।
ছারপোকা বিশেষ করে মানুষের রক্ত খেতে বেশি পছন্দ করে। তাই তারা মানুষের আশে পাশেই বসবাস করে যাতে সহজেই রক্ত গ্রহণ করতে পারে। এর জন্য ছারপোকা বাড়ির বিছানার তোষকের কোণায় বা ভাঁজে, সোফায়, পোশাক আশাকের মধ্যে থাকতে পছন্দ করে। ছারপোকা কামড়ালে রোগ হয় না, শুধু লালচে রঙের দাগ হয়।
ছারপোকা নিয়ে আমাদের মধ্যে কম আলোচনা হয় না। কিন্তু আপনি জানেন কি? ছারপোকার জন্ম কোথায় এবং কবে? চলুন জেনে নিই। হাজার হাজার বছর আগে থেকেই ছারপোকার অস্তিত্ব টিকে আছে। বিজ্ঞানীরা ফসিল বিশ্লেষণ করে দেখেছেন যে, এই পোকাটির জন্ম প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে। মধ্যপ্রাচ্য থেকে পোকাটির জন্ম হয়।
বিশেষ করে বাদুড় এবং মানুষের উভয়ের ব্যবহৃত গুহা থেকে এই পোকাটির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। বর্তমানে সারা বিশ্বে ছারপোকার বিস্তার ঘটেছে। মধ্যপ্রাচ্যে এর জন্ম হলেও ছারপোকা বেশি উপদ্রব উন্নত দেশগুলোতে। অবশ্য ১৯৩০ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত উন্নত দেশগুলোতে এর অস্তিত্ব খুব বেশি দেখা যেত না।
কারণ তখন ডিডিটি নামক একটি রাসায়নিকের প্রচলন থাকায় এরা বংশবিস্তার করতে সক্ষম হয়নি। কিন্তু ওই রাসায়নিকের প্রচলন নিষিদ্ধ হওয়ার পর থেকে পোকাটির উপদ্রব সারা বিশ্বে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে ছারপোকার অস্তিত্ব সব জায়গায় পাওয়া যায়।
আকাশমনি গাছের পাতা ব্যবহার করে ছারপোকা বিদায়
ছারপোকা ঘর থেকে বিনষ্ট করার সবচেয়ে কার্যকারী অন্যতম উপায় হচ্ছে আকাশমনি গাছের পাতা। এর ইংরেজি নাম ইউক্যালিপটাস (Eucalyptus)। এই গাছ এক ধরনের তেল পাওয়া যায়, যা অ্যান্টিসেপটিক বা পরিষ্কারক হিসেবে কাজে লাগে। এই গাছের পাতার সাহায্যে ছারপোকা দীর্ঘদিন মুক্তি পাওয়া যায়।
আকাশি বা আকাশমনি গাছের কিছু কাঁচা পাতা বিছানা বা তোষকের তলায় চারদিকে রেখে দিলে ছারপোকা তিন চার দিনের মধ্যেই বিদায় হয়ে যাবে। এই কার্যক্রমটি শতভাগ কাজ করে থাকে। বিশ্বাস না হলে আপনি নিজে এটা পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। ফলাফল আপনি নিজের চোখেই দেখতে পাবেন। এই প্রক্রিয়াটি আপনি তিনমাস অন্তর অন্তর করতে থাকবেন ছারপোকার উপদ্রব চিরতরে বিদায় হবে।
আরো পড়ুনঃ ডিমের কুসুমের উপকারিতা ও অপকারিতা
ছারপোকার জীবন চক্র
সাধারণত ছারপোকার কাজ হলো রক্ত গ্রহণ করা এবং বংশ বিস্তার করা। ছারপোকা সাধারণত ডিম ফুটে বাচ্চা হয়। একটি প্রাপ্তবয়স্ক ছারপোকা তার জীবনকালে ২৫০ টি ডিম পাড়ে। ডিম থেকে বাচ্চা জন্মাতে মাত্র ৬ থেকে ১০ দিন সময় লাগে। ছারপোকা দেখতে ওভাল আকৃতির এবং লালচে, কালচে বা বাদামি রঙের হয়ে থাকে।
তাদের ৬ টি পা রয়েছে। ডানা বা পাখা নেই তাই উড়তে পারে না। কিন্তু বুকের ভরে হেঁটে চলাচল করতে পারে। একটি ছারপোকা না খেয়ে ৬০ থেকে ৭০ দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। এইভাবে মানুষের ব্যবহৃত জিনিসপত্রের সাহায্যে এক দেশ থেকে অন্য দেশে যেতে পারে। ফলে খুব সহজেই যেকোন জায়গায় বংশ বিস্তার করতে পারে।
ছারপোকার বৈশিষ্ট্য এবং জীবনকাল কেমন
বিশ্বজুড়ে ছারপোকার ৯০ টি এরও বেশি প্রজাতি রয়েছে। তবে ব্রিটিশ পেস্ট কন্ট্রোল অ্যাসসোসিয়েশন বলছে, এর মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত বা বেশি দেখা যায় (সিমেক্স লেকটুলারিয়াস) সেটি মানুষের বসবাসের উপযোগী পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিয়েছে। ছারপোকা দেখতে সাধারণত উকুনের মত কিন্তু তাঁর থেকে একটু বড়। আকারে ১ থেকে ৭ মিলিমিটার পর্যন্ত হয়। দেখতে লালচে ও কালচে রঙের হয়ে থাকে।
ডানা বা পাখা থেকে না এরা বুকের ভরে পায়ে হেঁটে চলাচল করে এবং পোশাক, আসবাবপত্রের মাধ্যমে স্থান পরিবর্তন করে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন জায়গায় থাকবে না এবং অপরিষ্কার জায়গায় বেশি থাকবে তেমন টা ভাবা বোকামি। এরা সব ধরনের পরিস্থিতিতে পাওয়া যায়। গ্রামে এদের দেখা কম গেলেও বেশি দেখা যায় শহর গুলিতে। কারণ ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাতে এদের উপদ্রব বেশি।
পরিশেষে
আশা করি আপনারা ছারপোকা সমন্ধে যথেষ্ট ধারণা পেয়ে গেছেন। ছারপোকা সমন্ধে যদি পূর্বে আপনার ধারণা না থাকে তাহলে এই আর্টিক্যাল টি পড়লে ছারপোকার ব্যাপারে সমস্ত কিছু জানতে পারবেন।
আপনি যদি আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হন তাহলে আপনি আপনার আত্মীয় স্বজন এবং বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে তাদেরকেও এই সম্পর্কে জানিয়ে সচেতন করতে পারেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url